হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি - বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি
সবচেয়ে লাভবান ফসল গুলোর মধ্যে লাউ একটি। কম খরচে লাউ চাষ করে প্রচুর টাকা লাভ করা যায়। লাউ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি অল্প খরচে বেশি টাকা লাভ করতে পারবেন। হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে বছরের ১২ মাসেই লাউয়ের ফলন পাবেন।
লাউ চাষ অত্যন্ত লাভবান একটি ফসল। লাউ চাষ করতে তেমন কোন অর্থের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র এক টুকরো জমিতে অল্প কিছু টাকা খরচ করে লাউ চাষ করা যায়। যা অত্যন্ত লাভজনক ফসল। হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি ও বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি লাউ চাষ করে প্রচুর অর্থ আয় করতে পারবেন। লাউ চাষ সম্পর্কে প্রত্যেকটি বিষয়ে জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি - বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি
লাউ চাষ পদ্ধতি
লাউ চাষ করার জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষকেরা লাল চাষ করেন। কিন্তু লাউ চাষের সঠিক পদ্ধতি জানেন না বলে তারা সেই পরিমাণে লাভবান হতে পারেন না। লাউ চাষ করে যে অর্থ পাওয়া যায় সেটি লাভের অর্থ। কিন্তু আপনি পরিশ্রম করছেন ঠিক ঐ কিন্তু যদি পরিশ্রমের তুলনায় লাভ করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে পরিশ্রমটি বৃথা।
তাই সঠিক পদ্ধতিতে লাউ চাষ করলে তুলনামূলক সবচাইতে বেশি লাভবান হতে পারবেন। লাউ চাষের জন্য আপনাকে হাইব্রিড যাদের লাউ চাষ করতে হবে। হাইব্রিড জাতের লাউ ধরে বেশি এবং বড় হয় অনেক। এতে অল্প সময়ে প্রচুর ফল পাওয়া যায় এবং প্রয়োজন অর্থ ইনকাম করা যায়।
হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি
হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি দ্রুত লাউ চাষে লাভবান হতে পারবেন। হাইব্রিড লাউ চাষ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতির পাশাপাশি আপনি বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে বারোমাসি লাউ চাষ করতে পারেন। হাইব্রিড লাউ চাষ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি গুলো নিচে পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলঃ
- উপযুক্ত মাটি নির্বাচন
- জমি প্রস্তুত
- গর্ত তৈরি
- বীজ বপন
- মাচা তৈরি
- সেচ ব্যবস্থা
- স্যার প্রয়োগ
- আগাছা দমন
- পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ
- ফল সংগ্রহ
উপযুক্ত মাটি নির্বাচনঃ হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি গুলোর মধ্যে প্রথম পদ্ধতি হলো উপযুক্ত মাটি নির্বাচন করা। উপযুক্ত মাটিতে লাউ চাষ করলে ফলন ভালো হয়। ফলন ভালো হলে আপনি দ্রুত লাভবান হতে পারবেন। লাউ চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি হল বেলে দো-আঁশ অথবা দো-আঁশ মাটি। এই মাটির অত্যন্ত উর্বর হয় পানি নিষ্কাশন করতে পারে সহজেই। তাই লাউ চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি নির্বাচন করুন।
জমি প্রস্তুতঃ প্রথমে জমি প্রস্তুত করে নিন। লাউ চাষের জন্য কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বার জমি চাষ করে ভালোভাবে মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিন।
গর্ত তৈরিঃ লাউ গাছ অথবা বীজ লাগানোর জন্য অবশ্যই গর্ত করতে হবে। লাউ গাছ লাগানোর জন্য পাঁচ থেকে ছয় ফুট দূরত্বে গভীর গর্ত তৈরি করুন। এরপর গর্তে জৈব সার রাসায়নিক সার মিশ্রণ তৈরি করে মাটি দিয়ে সেখানে লাউ বীজ অথবা গাছ লাগাতে পারেন।
বীজ বপনঃ সময় মত অনুযায়ী আপনি জমিতে বীজ অথবা চারা রোপন করতে পারেন। বীজ রোপন করতে চাইলে চারা রোপন করার চাইতে কমপক্ষে ১৫ দিন আগে বীজ রোপন করতে হবে। এতে আপনি আগাম ফসল পাবেন। তাছাড়া বীজ থেকে চারা গজাতে ৮ থেকে ১০ দিন মতো সময় লাগে। তাই আপনি চাইলে গর্তে বীজ অথবা চারা দুটোই রোপন করতে পারেন।
মাচা তৈরিঃ লাউ চাষের জন্য মাচা তৈরি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। লাউ গাছের লতা মাটিতে থাকলে ফলন কম হয়। তাই লাউয়ের জন্য মাচা তৈরি করুন। আপনি মাচা তৈরির জন্য বাস অথবা সুতো, তারের জাল ব্যবহার করতে পারেন। চারিদিকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে উপরে সুতো টাঙিয়ে দেন কম খরচে সহজে মাচা তৈরি হবে।
সেচ ব্যবস্থাঃ সময়মতো লাউয়ের গাছের শেজ দিতে হয়। লাউ গাছের জন্য মাঝারি পরিমান পানি সেচ দিতে হয়। অতিরিক্ত পানি সেচ দিলে লাউ গাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শুধুমাত্র সীমিত পরিমানে পানি দিয়ে লাউ গাছের জমিতে সেচ দিন।
স্যার প্রয়োগঃ লাউ গাছকে সঠিক পুষ্টি দিতে, সঠিকভাবে বড় হয়ে দ্রুত ফল দেওয়ার জন্য গাছের সার প্রয়োগ করুন। কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর ইউরিয়া, পটাশ, এমপি সার প্রয়োগ করুন। পাশাপাশি জৈব সার প্রয়োগ করতে পারেন।
আগাছা দমনঃ সময়মতো জমির আগাছা দমন করুন। জমিতে আগাছা হলে লাউ গাছের পুষ্টি শোষণ করে ফেলবে। এতে লাউ গাছ দুর্বল হয়ে ফলন কম হবে। তাই লাউ চাষের জন্য অবশ্যই আগাছা দমন করা প্রয়োজন। সময় মত আগাছা দমন করলে লাউ গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল আসে।
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণঃ সময় মত কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করুন। নিয়মিত জমে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করুন। পোকামাকড়ের আক্রমণ বুঝতে পারলে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকামাকড় দূর করুন।
ফল সংগ্রহঃ লাউ গাছ অথবা বীজ লাগানোর কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফল ধরা শুরু হয়। লাউ গাছে ফল ধরলে দ্রুত বড় হয়। একটি ফল ধরার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই বিক্রয় উপযোগী হয়ে যায়। তাই আপনি গাছে ফল ধরা শুরু হলেই বিক্রয় করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিন। এরপর ফলের সাইজ বড় হলেই সময় মত বিক্রয় করে দিন।
প্রিয় পাঠক উপরে হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আপনারা এভাবে লাউ চাষ করে কম খরচে দ্রুত লাভবান হতে পারবেন। বেকারত্ব দূর করার জন্য দেশের সবজির চাহিদা পূরণের জন্য আপনি লাউ চাষ করে প্রচুর পরিমাণে অর্থ আয় করতে পারবেন।
বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি
বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি সারা বছর লাউ চাষ করতে পারবেন। অন্যান্য লাউ চাষের মতোই বারোমাসি লাউ চাষ করা যায়। সাধারণত হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় আপনি ওই পদ্ধতি অনুসরণ করেই বারোমাসি লাউ চাষ করতে পারেন। বারোমাসি লাউ চাষ করার জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন করতে হবে।
এরপর জমি ভালোভাবে চাষ করে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ওর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করুন। এরপর লাউ এর বীজ অথবা চারা রোপন করুন। এরপর লাভের মাচা তৈরি করে মাচায় লাউয়ের গাছ ওঠার ব্যবস্থা করে দিন। লাউ এর জমিতে সময়মতো পানি সেচ দিন। পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে কীটনাশক দিন। ফল ধরা শুরু করলে ফল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রয় করুন। প্রিয় পাঠক আশা করি বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
টবে লাউ চাষ পদ্ধতি
টবে লাউ চাষ করার জন্য কমপক্ষে আপনাকে ১৮-২০ ইঞ্চি গভীরতার টবের প্রয়োজন হবে। আপনি চাইলে পেট্রোলের ড্রাম ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া জিও ব্যাগের টব তৈরি করে লাউ চাষ করতে পারেন। টবে লাউ চাষ করার জন্য প্রথমে একটি টব সংগ্রহ করুন। এরপর দোআঁশ মাটির সাথে ৫ কেজি জৈব সার,
এক কেজি ইউরিয়া সার, ১ কেজি ডিএপি সার, ৫০০ গ্রাম পটাশ, ও ৫০০ গ্রাম টিএসপি সংমিশ্রণে মাটি ভালোভাবে মিশি মিশিয়ে নিন। এরপর সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে টব পূর্ণ করুন। টবে আপনি লাউ এর চারা অথবা বীজ দুটোই লাগাতে পারেন। এরপর কমপক্ষে দুই থেকে তিন ইঞ্চি গভীরতায় লাউয়ের বীজ রোপন করুন।
দিনে দুই থেকে তিনবার রোপনকৃত বিজে পানি দিন। চারা গজালে উপরে মাচার ব্যবস্থা করুন। নিয়মিত সেচ দিন, পোকামাকড় আক্রমণ করলে কীটনাশক দিন। এভাবে আপনি টবে লাউ চাষ করতে পারবেন।
মিষ্টি লাউ চাষ পদ্ধতি
বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি ও মিষ্টি লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন। মিষ্টি লাউ চাষ করার জন্য আপনি একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। প্রথমে জমি নির্বাচন করে ভালোভাবে চাষ করে নিন। এরপর মাটির ঝুরঝুরে হলে মই দিয়ে ঢিলা গুলো ভেঙ্গে দিন। এরপর পরিমাণ মতো জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করুন।
বীজ অথবা মিষ্টি লাভের চারা রোপন করুন। চারা রোপণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই এক চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব ৫ ফুট পরপর চারা লাগান। চারা লাগানোর পরে চারা তে সেচ দিন। যারা বড় হলে উপরে মাচা তৈরি করে দেন। আপনি সুতো অথবা বাঁশের মাধ্যমে মাচা তৈরি করতে পারেন। এভাবে সময় মত পরিচর্যা করুন। পোকা না করে আক্রমণ করলে কীটনাশক প্রয়োগ করে মিষ্টি লাউ চাষ করতে পারেন।
লাউ গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
লাউ গাছের সার প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকে খোঁজ করেন। লাউ গাছে প্রথম অবস্থায় সার প্রয়োগ করতে হয়। পরে গাছের উপর ভিত্তি করে সার প্রয়োগ করলেও চলে না করলেও চলে। জমি চাষ করার সময় লাউ গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়। জমি চাষ করার পর জমিতে প্রতি শতকে ৫ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া,
৫০০ গ্রাম ডিএপি, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম পটাশ, এবং এমপি সার ২৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করুন। এরপর জমি ভালোভাবে পুনরায় দুই থেকে একটি চাষ দিন। এরপর ঢিলা ভেঙে দেওয়ার জন্য মইদিন। মাটি ঝুরঝুরে হলে লাউচার অথবা বীজ লাগিয়ে দিন। লাউ গাছ বড় হয়ে যদি হালকা লালচে কালার ধারণ করে সেক্ষেত্রে দেওয়ার পর প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করুন।
শীতকালীন লাউ চাষ
লাউ শীতকালীন ফসল। তবে আগাম নাউ বিক্রয়ের জন্য শীত আসার কমপক্ষে দুই মাস আগে লাউ চারা অথবা বীজ রোপন করুন। এতে আপনি সর্বোচ্চ দামে লাউ বিক্রয় করতে পারবেন। সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে লাউয়ের বীজ অথবা চারা রোপন করুন। জমিতে অথবা টবে লাউ চাষ করতে পারেন। সঠিকভাবে জমি চাষ করার পর পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করে লাউ চারা লাগিয়ে দেন। চারা লাগানোর তিন মাসের মধ্যেই ফল বিক্রয় করতে পারবেন।
আগাম লাউ চাষ পদ্ধতি
আগাম লাউ চাষ করার জন্য আপনাকে প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে বীজ অথবা চারা রোপন করতে হবে। এতে আপনি সময়মতো আগাম লাউ বিক্রয় করতে পারবেন। আগাম লাউ চাষ করার জন্য আপন প্রথমে মাটি প্রস্তুত করে নিন। এরপর পরিমাণমতো সার দিয়ে জমিতে চারা অথবা বীজ রোপন করুন। চারা বড় হতে শুরু করলে উপরে মাচা তৈরি করে দিন। সময়মতো কীটনাশক ও পানি দিয়ে পরিচর্যা করুন।
লেখক এর মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলটিতে হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি ও বারোমাসি লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে সঠিক তথ্য শেয়ার করেছি। এছাড়া লাউ চাষ সম্পর্কে প্রত্যেকটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। লাউ চাষ সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে সে ক্ষেত্রে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। লাউ চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য আগাম সময়ে হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করুন।
এতে দ্রুত লাভবান হতে পারবেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। অন্যান্য কৃষি ও চাষাবাদ সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের কৃষি সম্পর্কিত ক্যাটাগরি ঘুরে আসুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url